‘প্রতীকি পরীক্ষা’ ও ‘প্রতীকি বিষপান’ কর্মসূচি পালনকালে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রামেবি) বৈষম্যবিরোধী নার্সিং অনুষদের ১১ শিক্ষার্থী ‘হিটস্ট্রোক’ করেছেন। শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের চিকিৎসকরা এ তথ্য নিশ্চিত করেন। প্রতিবাদ জানিয়ে ও ৭ দফা দাবি পুনর্ব্যক্ত করে বিকেলে ফের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন নার্সিং শিক্ষার্থীরা।
রামেক হাসপাতালের সামনে থেকে মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি সিপাইপাড়া দিয়ে লক্ষিপুর মোড় হয়ে টিবিপুকুর এলাকা ঘুরে রাজশাহী নার্সিং কলেজে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় ‘আমার বোন হাসপাতালে, প্রশাসন কেন অন্তরালে, আমার বোনের কিছু হলে, জ্বলবে আগুন রামেবিতে, হই হই রই রই, চোরা জাকির গেল কৈ, ইসমাইলের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে,- ইত্যাদি স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা।
মিছিল শেষে সন্ধ্যায় রাজশাহী নার্সিং কলেজ চত্বরে আন্দোলনকারীরা সমাবেশ করেন। এতে সাবেক স্টুডেন্ট নার্স নেতা মো. রাজু, চলমান আন্দোলনের সমন্বয়ক রিফাত আল মাহমুদ হাদি, রায়হান আলী বক্তব্য রাখেন। তারা বলেন, যতক্ষণ দাবি আদায় না হচ্ছে, ততক্ষণ আমরা ঘরে ফিরছি না। আমাদের সঙ্গে রোববার থেকে ২৩ নার্সিং কলেজের শিক্ষকদেরও রাজপথে নামতে হবে এবং দাবি আদায়ে ভূমিকা রাখতে হবে। অন্যথায় তাদেরও আমরা অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে পদত্যাগের দাবি জানাতে বাধ্য হব।
উল্লেখ, গত বুধবার থেকে রাজশাহী নগরীতে আন্দোলন করে আসছেন রামেবির ২৩ কলেজের নার্সিং শিক্ষার্থীরা। গলায় রশি ঝুলিয়ে প্রতীকি ফাঁস দিয়ে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে স্মারকলিপিও দেন তারা। প্রথমে পরীক্ষা গ্রহণে এক দফা দাবি থাকলেও বর্তমানে ৭ দাবিতে চলছে তাদের এ আন্দোলন। দাবিগুলো হলো-
১. স্থগিত হওয়া ২০১৯-২০ সেশনের বিএসসি-ইন-নার্সিং কোর্সের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে দুই কার্যদিবসের মধ্যে যে কোনো কর্মকর্তাকে পরীক্ষা পরিচালনার জন্য নির্বাহী দায়িত্ব প্রদান করতে হবে অথবা দুই কার্যদিবসের মধ্যে রামেবিতে নতুন উপাচার্য নিয়োগ দিতে হবে,
২. পরীক্ষা কমিটির সাথে সমন্বয় করে অভ্যন্তরীন ব্যবস্থায় পরীক্ষা গ্রহনের মাধ্যমে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করতে হবে,
৩. আগামী পহেলা অক্টোবর থেকে হাসপাতালে আমাদের ইন্টার্নশীপ শুরু নিশ্চিত করতে হবে,
৪. বেসরকারি কলেজসমূহে পরীক্ষার ফরম ফিলাপের অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ বন্ধ করতে হবে,
৫. রামেবিতে পরীক্ষার রেজাল্ট চ্যালেঞ্জের ফি প্রতি সাবজেক্ট ৫ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ১ হাজার টাকা করতে হবে,
৬. রাজশাহীস্থ বেসরকারি নার্সিং কলেজের বিএসসি শিক্ষার্থীদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করে দিতে হবে,
৭. রামেবির নার্সিং অনুষদে সেশনজট সৃষ্টি, পরীক্ষা বানচাল ও জটিলতার ঘটনায় সন্দেহভাজন ১২ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অপসারণপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ২০১৯-২০ সেশনের বিএসসি-ইন-নার্সিং কোর্সের চূড়ান্ত পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে ৯ মাস পিছিয়ে আছি। কবে নাগাদ আমাদের পরীক্ষা হবে, কোনো নিশ্চয়তা আমরা পাচ্ছি না। সংশ্লিষ্টদের গাফেলতির কারণে চরম অনিশ্চয়তায় ২৩টি কলেজের প্রায় ৩ হাজার নার্সিং শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ।
এদিন বিএসসি চতুর্থ বর্ষের রিসার্চ-ইন-নার্সিং পরীক্ষা দেন শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের ভেতর থেকেই চারজনকে উপাচার্য, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও পরীক্ষা কক্ষ পরিদর্শক (এক্সটারনাল ও ইন্টারনাল) করা হয়। এসময় হঠাৎ পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর আন্দোলনকারী সিংহভাগ পরীক্ষার্থীকে ফেল দেখিয়ে ফলাফল প্রকাশ করা হয়। হতাশ হয়ে প্রতীকি বিষপান করেন শিক্ষার্থীরা। অন্তত ১৫ জনকে রামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ভর্তি করা হয়েছে ১১ জনকে। এদের মধ্যে ২ জন রাজশাহী নার্সিং কলেজের, উদয়ন নার্সিং কলেজের একজন। আর বাকিরা রংপুর ও লালমনিরহাট নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থী।
প্রতীকি পরীক্ষা দেয়া শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, এভাবেই ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের ফেল করানো হয়। আন্দোলনে দাবি আদায় হলেও ফলাফলে প্রভাব বিস্তারের শঙ্কায় তাদের আতঙ্কিত। অসুস্থ হয়ে অনেককেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ায় আল্টিমেটাম দিয়ে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।
রামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ ডা. শংকর কে বিশ্বাস বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক ছিল। গরমে কারণে বেশ কয়েকজন অসুস্থ হন। ১১ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।